থাইল্যান্ড লটারির নাম প্রবাসীদের কাছে অপরিচিত কিছু নয়, বিশেষ করে যারা সৌদি আরবে বসবাস করছেন তাদের মধ্যে অনেকেই এ সম্পর্কে জানেন। প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছেন যে এই লটারির মাধ্যমে রাতারাতি ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। ফলে হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী সৌদি আরবে বসে থাইল্যান্ড লটারি টিকিট কেনেন কিংবা লটারির ফলাফল জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানে অনেক অজানা বাস্তবতা রয়েছে যা জানলে হয়তো সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন। ২০২৫ সালে যখন নতুন করে থাইল্যান্ড লটারি সৌদি আরবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে, তখন আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে এর প্রকৃত সত্য জানা এবং ভুল ধারণা থেকে দূরে থাকা

থাইল্যান্ড লটারি কী এবং এর নিয়মকানুন
থাইল্যান্ড লটারি মূলত থাইল্যান্ড সরকারের অনুমোদিত একটি রাষ্ট্র-পরিচালিত লটারি। এটি পরিচালনা করে Government Lottery Office (GLO)। প্রতি মাসের ১ এবং ১৬ তারিখে এই লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি টিকিট আগে থেকেই মুদ্রিত থাকে এবং দুটি টিকিট একসাথে জোড়ায় বিক্রি হয়। প্রতিটি টিকিটে থাকে ছয় সংখ্যার একটি নির্দিষ্ট নাম্বার। এই লটারির প্রথম পুরস্কার ৬ মিলিয়ন বাথ (যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় কয়েক কোটি টাকা)। এছাড়াও রয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার সহ আরও অনেক ছোট পুরস্কার। এই কারণে থাইল্যান্ডে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও দেশটির বাইরে, বিশেষ করে সৌদি আরবে এর বৈধতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে
সৌদি আরবে থাইল্যান্ড লটারি কেন আলোচিত
সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ২.৬ মিলিয়ন বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। তারা নিজেদের পরিশ্রমের অর্থ দেশে পাঠিয়ে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছেন। এই প্রবাসীদের মধ্যে অনেকেই স্বপ্ন দেখেন দ্রুত ধনী হওয়ার, আর সেই স্বপ্নের পথ হিসেবে থাইল্যান্ড লটারিকে বেছে নেন। কিন্তু একটি বিষয় অনেকেই ভুলে যান, সৌদি আরবে জুয়া খেলা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জুয়া, বাজি, লটারি খেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ অনেকেই এই আইন উপেক্ষা করে লটারির নাম্বার কেনেন বা ফলাফল জানার চেষ্টা করেন। ২০২৫ সালে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে কারণ ডিজিটাল মাধ্যমে লটারি সম্পর্কিত তথ্য সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে প্রবাসীদের কাছে
থাইল্যান্ড লটারি সৌদি আরবে বৈধ নাকি অবৈধ
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো সৌদি আরবে থাইল্যান্ড লটারি বৈধ কি না। উত্তরটি হলো একেবারেই না। সৌদি আরবে যেকোনো ধরনের জুয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই থাইল্যান্ড লটারিতে অংশগ্রহণ করা বা সৌদিতে বসে টিকিট কেনা একেবারেই অবৈধ। এমনকি অনলাইনে গোপনে লটারি কেনার চেষ্টা করলেও এটি সৌদি আইনের চোখে অপরাধ হিসেবেই গণ্য হবে। ফলে কেউ ধরা পড়লে তাকে জেল-জরিমানার মুখোমুখি হতে হতে পারে। তাই প্রবাসীদের উচিত এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখা
থাইল্যান্ড লটারি রেজাল্ট কিভাবে জানা যায়
সৌদি আরবের ভেতরে থাইল্যান্ড লটারির ফলাফল জানার কোনো বৈধ মাধ্যম নেই। কারণ সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এর অনুমতি নেই। তবে থাইল্যান্ডে যারা বসবাস করেন তারা Government Lottery Office (GLO) এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল দেখতে পারেন। এছাড়াও থাইল্যান্ডের কিছু টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও লাইভ ড্র প্রচারিত হয়। সৌদিতে যারা লটারির প্রতি আগ্রহী তারা সাধারণত অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে ফলাফল জানেন, যদিও এটি বৈধ নয়। এর ফলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে কারণ অনেক ভুয়া ওয়েবসাইট লটারির নামে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়
ইসলামি দৃষ্টিতে লটারির অবস্থান
সৌদি আরব একটি ইসলামি রাষ্ট্র এবং ইসলামে জুয়া বা ভাগ্য নির্ভর খেলা সম্পূর্ণরূপে হারাম। কোরআন-হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে মদ্যপান ও জুয়া মানব জীবনের জন্য ক্ষতিকর এবং মুসলমানদের এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। ফলে সৌদি সরকারের আইন যেমন লটারিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে, তেমনি ইসলামও এটিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। একজন মুসলিম প্রবাসীর জন্য তাই দ্বিগুণ দায়িত্ব হলো এই ধরনের অবৈধ ও হারাম কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা
প্রবাসীদের জন্য সতর্কবার্তা
বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে, থাইল্যান্ড লটারির নামে অনেক প্রবাসী প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। বাংলাদেশি প্রবাসীদের লক্ষ্য করে প্রতারক চক্র নানা ফাঁদ পেতে রেখেছে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় গণমাধ্যম Jamuna TV এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, কীভাবে থাইল্যান্ড লটারির মাধ্যমে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলা হয়। তাই প্রবাসীদের সচেতন হওয়া জরুরি। কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স কখনোই এই ধরনের অবৈধ পথে খরচ করা উচিত নয়
থাইল্যান্ড লটারির বিকল্প চিন্তা
একজন প্রবাসী তার কষ্টার্জিত টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। লটারির মতো অনিশ্চিত ও অবৈধ পথে অর্থ ব্যয় না করে বৈধ উপায়ে সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং ব্যবসার সুযোগ খোঁজা উচিত। বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও এবং সরকারি প্রকল্পে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ভালো সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সৌদিতে বৈধ ব্যবসা বা স্কিল ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে অনেক বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব
FAQ – সাধারণ কিছু প্রশ্ন
প্রশ্ন ১: থাইল্যান্ড লটারি কি সৌদি আরবে বৈধ?
না, সৌদি আরবে যেকোনো ধরনের লটারি বা জুয়া অবৈধ এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ
প্রশ্ন ২: আমি কি অনলাইনে বসে থাইল্যান্ড লটারি কিনতে পারি?
না, অনলাইনে কেনা গেলেও এটি সৌদি আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ এবং ধরা পড়লে জেল-জরিমানার শিকার হতে পারেন
প্রশ্ন ৩: থাইল্যান্ড লটারির রেজাল্ট কোথায় পাওয়া যায়?
থাইল্যান্ডে বসবাসকারীরা Government Lottery Office (GLO) এর ওয়েবসাইট ও থাই টেলিভিশন থেকে ফলাফল জানতে পারেন। সৌদিতে এর কোনো বৈধ মাধ্যম নেই
প্রশ্ন ৪: ইসলাম অনুযায়ী লটারি খেলা কেমন?
ইসলামে জুয়া বা লটারি সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
প্রশ্ন ৫: প্রবাসীরা কিভাবে প্রতারণা থেকে বাঁচতে পারেন?
অবৈধ লটারির ফাঁদে না পড়ে বৈধ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিলে প্রতারণা থেকে সহজেই বাঁচা সম্ভব
উপসংহার
থাইল্যান্ড লটারি সৌদি আরব ২০২৫ প্রবাসীদের জন্য আলোচনার কেন্দ্র হলেও এটি একেবারেই বৈধ নয়। সৌদি সরকারের আইন ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ দুটো দিক থেকেই লটারিতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একজন সচেতন বাংলাদেশি প্রবাসীর উচিত এই ধরনের অবৈধ কাজ থেকে দূরে থাকা এবং কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স বৈধ পথে ব্যবহার করা। তাই প্রবাসী ভাইয়েরা, লটারির ফাঁদ থেকে দূরে থাকুন, বৈধ বিনিয়োগ করুন, নিজের জীবনকে করুন নিরাপদ ও সফল
Leave a Reply