সৌদি আরব বহু বছর ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক ও পেশাজীবীদের অন্যতম গন্তব্য। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি কেবল ধর্মীয় গুরুত্বের জন্যই নয়, কর্মসংস্থান এবং উচ্চ আয়ের জন্যও বহুল আলোচিত। বিশেষ করে “কোম্পানি ভিসা” হলো সৌদি আরবে চাকরির অন্যতম প্রধান পথ।
অনেকেই জানতে চান – সৌদি আরব কোম্পানি ভিসা বেতন কত? এই আর্টিকেলে আমরা বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

কোম্পানি ভিসা কী?
কোম্পানি ভিসা হলো সৌদি আরবের একটি ওয়ার্ক ভিসা যা কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানি একজন বিদেশি কর্মীকে দেয়। অর্থাৎ, একজন শ্রমিক বা পেশাজীবী শুধুমাত্র সেই কোম্পানির অধীনে কাজ করার বৈধ অনুমতি পান।
এই ভিসার জন্য সাধারণত প্রয়োজন হয়:
- কোম্পানির অফার লেটার
- বৈধ পাসপোর্ট
- মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট
- সরকারি অনুমোদনপত্র
সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসার ধরণ
সৌদি আরবে বিভিন্ন ধরণের কাজের জন্য ভিন্ন ভিসা দেওয়া হয়। যেমন:
- অদক্ষ শ্রমিক ভিসা – নির্মাণশ্রমিক, ক্লিনার, কৃষি শ্রমিক
- আংশিক দক্ষ ভিসা – ড্রাইভার, হেলপার, ইলেকট্রিশিয়ান
- দক্ষ পেশাজীবী ভিসা – ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, আইটি এক্সপার্ট, অ্যাকাউন্ট্যান্ট
- ম্যানেজমেন্ট লেভেল ভিসা – সুপারভাইজার, ম্যানেজার, এক্সিকিউটিভ
কোম্পানি ভিসার মাধ্যমে বেতন কীভাবে নির্ধারিত হয়?
সৌদি আরবে বেতন নির্ভর করে কিছু মূল বিষয়ের উপর:
- কাজের ধরন ও পদবী – শ্রমিক ও পেশাজীবীর বেতন অনেকটাই ভিন্ন।
- অভিজ্ঞতা – অভিজ্ঞ কর্মীর বেতন সবসময় বেশি হয়।
- কোম্পানির আকার – বহুজাতিক বা বড় কোম্পানি ছোট কোম্পানির চেয়ে বেশি বেতন দেয়।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা – উচ্চ শিক্ষিত প্রবাসীরা বেশি বেতন পান।
- চুক্তির শর্ত – ওভারটাইম, আবাসন, ভাতা ইত্যাদি সুবিধা মোট বেতনকে প্রভাবিত করে।
সৌদি কোম্পানি ভিসা বেতন – সাধারণ ধারণা (২০২৪)
বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক রূপান্তরসহ মাসিক গড় বেতন:
- অদক্ষ শ্রমিক: ৩৫,০০০ – ৭০,০০০ টাকা (SAR ১,৩০০ – ২,৫০০)
- ড্রাইভার: প্রায় ৮০,০০০ – ১,১০,০০০ টাকা (SAR ৩,০০০ – ৪,২০০)
- ইলেকট্রিশিয়ান: SAR ১,৫০০ – ২,৫০০ (৫০,০০০ – ৮৫,০০০ টাকা)
- হোটেল/রেস্টুরেন্ট কর্মী: SAR ১,২০০ – ২,০০০ (৪২,০০০ – ৭০,০০০ টাকা)
- অ্যাকাউন্ট্যান্ট (জুনিয়র): SAR ৭,০০০ – ১২,০০০
- অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিনিয়র): SAR ১৮,০০০ – ৩০,০০০+
- আইটি স্পেশালিস্ট: SAR ১০,০০০ – ২০,০০০
- ইঞ্জিনিয়ার (জুনিয়র): SAR ৯,০০০ – ১৫,০০০
- ইঞ্জিনিয়ার (সিনিয়র): SAR ২৫,০০০ – ৫০,০০০+
- ম্যানেজার/সুপারভাইজার: SAR ২০,০০০ – ৪০,০০০+
👉 মনে রাখতে হবে, প্রকৃত বেতন কোম্পানির ধরন ও কাজের চাহিদার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।
ফ্রি ভিসা বনাম কোম্পানি ভিসা
বিষয় | ফ্রি ভিসা | কোম্পানি ভিসা |
---|---|---|
কাজের নিশ্চয়তা | অনিশ্চিত | নিশ্চিত |
বেতন | কম/অস্থির | নির্দিষ্ট ও তুলনামূলক বেশি |
সুবিধা | সীমিত | আবাসন, যাতায়াত, ওভারটাইম ভাতা |
প্রতারণার ঝুঁকি | বেশি | কম |
কোম্পানি ভিসার সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা:
- নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে চাকরি নিশ্চয়তা
- আবাসন, চিকিৎসা, ভাতা ও বোনাস সুবিধা
- ওভারটাইম পেলে বেতনের পরিমাণ অনেক বাড়ে
অসুবিধা:
- কোম্পানি পরিবর্তন করা কঠিন
- কখনো কখনো চুক্তি অনুযায়ী বেতন না দেওয়া
- ভিসা বাতিল হলে নতুন ভিসা করতে হয়
সৌদি ভিসা চেক করার পদ্ধতি
সৌদি আরবে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভিসার সত্যতা যাচাই করা জরুরি।
১. মুয়াক্কালা (Muqeem) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
২. পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সার্চ করুন।
৩. ভিসার তথ্য মিলে গেলে নিশ্চিত হবেন এটি বৈধ।
প্রতারণা এড়াতে করণীয়
- দালালের মাধ্যমে ভিসা না নিয়ে সরাসরি কোম্পানি বা রেজিস্টার্ড এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা নিন।
- চুক্তিপত্র হাতে পাওয়ার আগে টাকা লেনদেন করবেন না।
- কোম্পানির নাম ও ভিসার ধরণ অবশ্যই যাচাই করুন।
উপসংহার
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা হলো প্রবাসীদের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ ও স্থিতিশীল চাকরির সুযোগ। ভিসার ধরন, কাজের প্রকৃতি এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বেতন ভিন্ন হতে পারে। তাই বিদেশে যাওয়ার আগে সঠিক তথ্য যাচাই করুন এবং ভালো কোম্পানির ভিসা বেছে নিন।
👉 সঠিক প্রস্তুতি ও সঠিক কোম্পানি বাছাই করলে সৌদি আরব আপনার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার খুলে দিতে পারে।
Leave a Reply